History of piracy and terrorism - 16th-18th century (in Bangla)

For the first time I am posting an article in Bangla on Arakan.
HS

“মগের মুল্লুক” ভয়ংকর ত্রাসের অপর নাম যা যুগ যুগ ধরে বাংলার শিশুরাও জানে
> ====================================================
>
> কারণঃ
>
> যুগে যুগে বাঙ্গালীদের উপর মগদের বর্বর অত্যাচার
> ============================================
> বার্মিজরা ঐতিহাসিকভাবেই বর্বর, বাঙালিদের মানুষ মনে করে না বার্মিজরা ঐতিহাসিকভাবেই বর্বর, বাঙালিদের মানুষ মনে করে না।
>
> ১৬২১ থেকে ১৬২৪ সাল। বার্মিজরা এই পাঁচ বছরে ৪২ হাজার বাঙালিকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। কেবলমাত্র ১৬২৯ সালের পর অল্প সময়ের মধ্যেই ধরে নিয়ে যাওয়া হয় ১৮ হাজার মানুষকে।
>
> মগ দস্যুরা গ্রাম-কে-গ্রাম লুটপাট, হত্যা, লুন্ঠন শেষে অবশিষ্ট সম্পদ আগুনে পুড়িয়ে দিত। গ্রামের পর গ্রাম তাদের আগুনে ভষ্ম হয়েছে। বিয়ে-পূজা-পার্বন বা বড় উৎসবের সময়ও এই দস্যুরা হাজির হতো। লুটপাট আর হত্যা ছিল এদের নেশা।
>
> ধরে নেয়া লোকজনের হাতের তালু ছিদ্র করে তার ভেতর সরু বেত ঢুকিয়ে দিয়ে বেঁধে জন্তুর মতো গাদাগাদি করে ফেলে রাখা হত জাহাজের পাটাতনের নিচে। অন্য দেশের বন্দরে নিয়ে বিক্রি করে দেয়া হত তাদের। বাঙালি বিক্রির একাধিক বাজারও ছিল বার্মায়. মগরা চট্টগ্রাম থেকে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত দখল করে নিয়েছিল। সে সময়কার বাঙালি নারীদের দুঃখগাঁথা আর দীর্ঘশ্বাস এখনও অনেক লোকগানে পাওয়া যায়।
>
> ফরাসি পর্যটক বার্নিয়ের-এর ভ্রমণ বৃত্তান্তে এমন ভয়ঙ্কর তথ্যই লেখা রয়েছে। মগের মুল্লুক বলে যে কথা তা এমনি এমনি লোকমুখে আসেনি। 'ইস্ট ইন্ডিয়া ক্রোনিক'স'-এর বর্ণনায় জানা যায়, ১৭১৮ সালে বার্মার রাখাইন রাজা দক্ষিণ বঙ্গ তছনছ করে অন্তত ১৮০০ জন সাধারণ অধিবাসীদের ধরে নিয়ে যায়। বন্দীদের অমানুষিক উপায়ে রাজার সামনে হাজির করা হয়। রাখাইন রাজা সেখান থেকে বেছে বেছে একদলকে তার নিজের দাস বানায়, অবশিষ্টদেরকে গলায় দিড় বেঁধে ক্রীতদাসের বাজারে বিক্রি করা হয়।
>
> বৃহত্তর বরিশাল, খুলনা ও পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা এলাকা ছিল বলতে গেলে মগদের দখলে। উপকূলভাগ থেকে সুদূর ঢাকা পর্যন্ত নদী তীরবর্তী এলাকা প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়েছিল। নদী তীরবর্তী কোন বাড়িতে রাতের বেলা আলো জ্বালানো হত না এসব জলদস্যুদের ভয়ে।
>
> ১৭৬১ সালে প্রকাশিত রেসলের ম্যাপে দক্ষিণ বঙ্গে বেশ কয়েকটি জনবিরল এলাকার কথা বলা হয়। এতে কারণ হিসেবে 'মগদের দ্বারা উৎসন্ন' লেখা হয়েছে। এ সময় গোটা বাকেরগঞ্জ এলাকা প্রায় জনমানবশূন্য হয়ে গিয়েছিল। প্যারিসে রক্ষিত মোগল আমলের মাঝামাঝি পর্তুগিজদের প্রণীত একটি ম্যাপে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় পাঁচটি সমৃদ্ধ বন্দরের উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু মগদের অত্যাচারে এসব বন্দর ও জনপদ পরিত্যক্ত হয় বলে মনে করেন ঐতিহাসিকরা। পরবর্তীতে ১৬৬৩ সালে সুবেদার শায়েস্তা খাঁ ক্ষমতায় আসলে মগদের বিতাড়িত করা হয় দেশ থেকে।
>
> ইনিয়ে বিনিয়ে যেসব উঠতি বকলম যোদ্ধারা রোহিঙ্গা নির্যাতনের সাফাই গাইছেন তাদের জন্য এ লেখাটা। ঐতিহাসিকভাবেই বার্মিজরা বাঙালিদের মানুষ হিসেবে গন্য করে না। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের যেসব খবর মিডিয়ায় আসছে তা অতিরঞ্জিত নয়। এটা অনেক ক্ষেত্রে সত্য ঘটনার থেকেও অনেক কম। ১৬০০ শতক যারা নির্যাতনের এমন সব নিষ্ঠুর পন্থা জানতো, বর্তমানে তাদের নির্যাতনের ভয়াবহতা উপলব্ধির বিষয়।
>
> আমাদের ঐতিহ্যগতভাবেই আরাকানের সঙ্গে সুস্পর্ক বিদ্যমান। সাহিত্য-সংস্কৃতির ছিল অনেক মিল। বড় বড় কবিদের জন্মও আরাকান রাজসভায়।
> -------------------------------------------------------------------------
>
> আরাকান - মুসলিম নিধনে মগদের এক বধ্যভূমির নাম
> ==================
> আরাকান পশ্চিম বর্মীয় সীমান্তে পাহাড়ে ঘেরা এক বিচ্ছিন্ন উপত্যকা। এ স্বাধীন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ছিল।তাদের ঘরে সুখ শান্তির কোন কমতি ছিল না। ১৭৮৪ সালে বর্মীয় রাজা কর্তৃক দখলের পর রাখাইন রাজ্যের সুচনা হতেই তাদের এ ঐতিহ্য ও শান্তি ক্রমাগতভাবে হারাতে শুরু করে।সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছোবলে বিষাক্ত হয়ে উঠতে থাকে এ অঞ্চলের বাতাস।
>
> এখানে একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয় ১৭৮৪ সাল পরবর্তী রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতী বিশেষত চাকমারা উত্তর পার্বত্য অঞ্চলে, মারমারা বান্দরবন অঞ্চলে আরাকান রাজ্য হতে স্তানান্তরিত হয়ে বসবাস শুরু করে। অথচ ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আমাদের দেশের উল্লেখিত উপজাতিরা নিজেদের পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী দাবী করে সফল হলেও রোহিঙ্গারা আরাকানের আদিবাসীত দুরের কথা নাগরিক হিসেবেই স্বীকৃতি পাচ্ছে না।
>
> ১৮২৪ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অ্যাংলো বার্মা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বার্মা দখল করলে রাখাইন প্রদেশ তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এসময় বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজের জন্যে ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চল হতে অনেকে বার্মায় আগমন করেন।এই মাইগ্রেসনের অজুহাতে মায়ানমার সরকার এখন দাবী করে আসছে আরাকানের সকল রোহিঙ্গা চট্টগ্রামের বাঙ্গালি।কি হাস্যকর সমীকরণ।
>
> ১৯৪২ সালে জাপান ব্রিটিশদের তাড়িয়ে বার্মা দখল করে। ব্রিটিশদের কাছে সুবিধা নেওয়ার অভিযোগে বার্মিজ জাতীয়তাবাদীরা রোহিঙ্গা দের উপর নুতন ভাবে আক্রমন শুরু করে।দেশান্তরিত হতে থাকে রোহিঙ্গারা।
>
> ১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীনতার পর রোহিঙ্গাদের সাথে সম্পর্কের তিক্তটা আরও বাড়তে থাকে। ফলশ্রুতিতে আরাকান রোহিঙ্গারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হতে আগ্রহী হয়ে । এ অপরাধে বার্মা সরকার আরও আগ্রাসী হয়ে উঠে। দেশদ্রোহিতার অভিযোগে রাখাইন প্রদেশের বিভিন্ন পদ হতে রহিঙ্গা মুসলমানগণ চাকুরীচ্যুত হতে থাকেন। তাদের স্থানে নিয়োগ দেয়া হয় বউদ্ধ্যদের।
>
> ১৯৪৭ সালে জেনারেল অং সান সকল রাষ্ট্রের আংশিক স্বায়ত্ত শাসনে আগ্রহী হলেও তার মৃত্যুর পর সব আশায় গুড়বালি হয়ে একক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়।এর ফলে ১৯৫৮ পরবর্তী পরিস্থিতি আরও রক্তক্ষয়ী রুপ ধারন করে।প্রধানমন্ত্রী উ নু বার্মাকে বৌদ্ধ রাষ্ট্র ঘোষণার ফলে রহিঙ্গা মুসলমানরা আরও নাজুক পরিস্থিতির শিকার হয়ে পরে।শুরু হয় গৃহ যুদ্ধ। অন্য গোত্রের সাথে যুক্ত হয়ে রোহিঙ্গা মুসলিম মুজাহিদগনও কেন্দ্রিও সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পরে তবে টিকে থাকতে পারেনি বেশি দিন।
>
> ১৯৬২ সালে বার্মায় সামরিক সরকারের আবির্ভাব ঘটে। জেনারেল নে উইন রোহিঙ্গাদের রক্ত পিপাসায় উন্মুখ হয়ে উঠে।অত্যন্ত শক্ত অবস্থান নেন রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে। তিনি দুটি অপশন উন্মুক্ত রাখেন রোহিঙ্গাদের জন্যে- হয় ধর্মান্তরিত হয়ে বৌদ্ধ হয়ে নাগরিকত্ত নেও নতুবা রাখাইন রাষ্ট্র তথা বার্মা ত্যাগ কর। ধর্মান্তরিত কিংবা তাদের পবিত্র মাতৃভূমি ত্যাগের এই অবাস্তব প্রস্তাবনা কোন রোহিঙ্গা মেনে নিতে পারেনি।
>
> দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া রোহিঙ্গারা শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। ফলশ্রুতিতে ১৯৭৭ সালে ভঙ্গুর প্রায় রোহিঙ্গা স্বাধীনতা কামী মুসলমানদের বিরুদ্ধে সামরিক জান্তা সরকার পরিচালনা করেন ন্যক্কারজনক “ Operation King Dragon”। উদ্দেশ্য ছিল বিদেশী রোহিঙ্গাদের তাদের নিজস্ব ভুমি থেকে বিতাড়িত করা। তাদের ভাষায় রোহিঙ্গারা রাখাইন প্রদেশের অধিবাসী নয়।আশ্চর্যজনক ভাবে লক্ষ্য করা যায় বার্মা সরকার কর্তৃক প্রকাশিত ১৩৫ উপজাতি গোষ্ঠির (ethnic group) মধ্যে রোহিঙ্গাদের নাম নেই। শুরু হয় রোহিঙ্গা ইতিহাস বিকৃতি, তারা হয়ে পরে “Stateless within the State”। এ আক্রমনে প্রায় ২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বানের পানির মত পারি জমাতে থাকে বাংলাদেশের কক্সবাজার, টেকনাফ, বান্দরবনে। বার্মিজ হায়ানা বাহিনী বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে অস্বীকার করে তাদের নৃশংসতার কথা।
> ------------------------------------------------------------------------------------
>
> নিজ দেশে নির্যাতিত পরবাসী রোহিঙ্গারা
> ==================
> টাইমস (২০১১) অনুসারে পশ্চিম বর্মীয় অঞ্চল ১৫০০ খ্রিস্টাব্দ পূর্ব হতেই ইসলামিক স্ট্যাট হিসাবেই পরিচিত (ম্যাপ সংযুক্ত)। একইভাবে মায়ানমার এনসাইক্লোপিডিয়া (১৯৬৪) এ উত্তর রাখাইন বা আরাকানকে ইসলামিক অঞ্চল হিসাবে এবং রোহিঙ্গাকে এর উপজাতি হিসাবে উল্লেখ রয়েছে।
>
> নে উইন সামরিক সরকার বিভিন্ন প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে দেশীয় নতুন প্রজন্ম ও বিদেশীদের বোঝাবার চেষ্টা করে এরা চিটাগাঙ্গীয়ান বাঙ্গালী যারা ব্রিটিশ কলোনিয়াল সময়ে এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা সংগ্রামের পরে সেখানে বসবাস শুরু করে।সামরিক সরকার তাদের বার্মার নাগরিক অস্বীকার করলেও রাখাইন হতে হটিয়ে দেয়া রোহিঙ্গা পরিবারের সদস্যদের কাছে বার্মার National Registration Card (NRC) তাদের নাগরিকত্ত সন্দেহাতীত ভাবে প্রমান করে।অতঃপর জাতিসংঘের মধ্যস্ততায় ১৯৭৮ সালে আনুমানিক ২ লক্ষ্য রোহিঙ্গা তাদের পবিত্র মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে সক্ষম হয়।
>
> সামরিক সরকার কর্তৃক ১৯৮২ সালে তৈরী নাগরিকত্ত আইনে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ত সরকারী ভাবে অস্বীকার করা হয়।১৮২৪ খৃস্টাব্দ পরবর্তী যারা আরাকানে স্তানান্তরির হয়েছেন তাদের অবৈধ বাসিন্দা হিসাবে গন্য করা হয়। বাস্তবিকভাবে এ আইনের বলে সকল রোহিঙ্গারা বর্মীয়দেশে অবৈধ অধিবাসী হয়ে পরে। তাদের নাগরিকত্তের সকল সনদ কেড়ে নেয়া হয়। ১৯৯১ সালে সেনাবাহিনীর সাঁড়াশি আক্রমনে আড়াই লক্ষাধীক রোহিঙ্গা পালিয়ে আসে। আবার জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ১৯৯২ হতে ১৯৯৭ সালের মাঝে সমসংখ্যক রোহিঙ্গা ফিরে যায় আরাকানে।
>
> এর পরবর্তী ইতিহাস সবারি জানা। ২০১২, ২০১৬, ২০১৭ সাল, একের পর এক আক্রমন। তাদের অপরাধ বৌদ্ধ্য নাগরিক কিংবা নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা। ফলশ্রুতিতে নির্বিচারে বর্বর নরহত্যা, গন ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ।
>
> নিজের দেশে পরবাসী রোহিঙ্গারা। ভোটাধীকার নেই তাদের। তাদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রা অত্যন্ত নিষ্ঠুর ভাবে নিয়ন্ত্রিত। তাদের কোথাও ভ্রমন করতে, বিয়ে করতে, সন্তান নিতে প্রয়োজন হয় সরকারী অনুমোদন সঙ্গে গুনতে হয় মোটা অংকের টাকা।

Comments

Popular posts from this blog

Defining the Biden Doctrine

George Soros at the Davos Forum